অনেক দিন বাদে
ল্যাপটপ ধরলাম। মন কেমন যেন অবশ হয়ে আছে। এ এক অভুতপূর্ব পরিস্থিতি। কবে যে এর শেষ
তার উত্তর বিশ্ববাসীর কারোর জানা নেই। জীবনে খারাপ সময় আসে- যতটা খারাপ হওয়া সম্ভব
ততটাই। তার প্রমানও পেয়েছি। আবার এটাও শিখেছি যে খারাপ সময়ের মধ্যেও কাজ করে যেতে
হয়। স্বপ্নকে জাগিয়ে রাখতে হয়। স্বপ্ন জেগেই দেখতে হয়।
অনেক শুভানুধ্যায়ী,
আবাসিকদের পরিবার পরিজন এবং কল্যাণী সিনিয়ার সিটিজেন হাউসিং-এর সদস্য-সদস্যারা ফোন
করছেন আমাদের পরিস্থিতি জানার জন্য। কোন ফোন ধরতে ভালো লাগছে না। তবু ধরতেই হয়। তাই
ভাবলাম আমরা কেমন আছি বা কি ভাবছি তা সবাইকে জানানো কাজের মধ্যেই পড়ে। নিজের কাজ
যখন থামিয়ে বসে নেই, তাহলে এই কাজটাও সেরে ফেলি।
এই মুহূর্তে কি
করছি তা কিছু কথায় লিখি। হাবড়া অশোকনগরে আমাদের দুটো আবাসন মিলিয়ে ২৮ জন মতো
প্রবীণ-প্রবীণা বরাবরের জন্য থাকেন। এঁরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু ভাবে অসুস্থ –
বেঁচে থাকার জন্য অন্যের সাহায্য দরকার হয়। এর মধ্যে অর্ধেক বিছানায় পুরোপুরি
শয্যাশায়ী। বাদবাকীদের মধ্যে কেউ ডিমেন্সিয়া, কেউ সাইকিয়াট্রি কেউ বা মেন্টাল
রিটার্ডেড। মানসিক ভাবে হাতে গোনা কয়েকজন সুস্থ।
জনতা কার্ফিউর
দিনই বুঝে গেছিলাম লক ডাউন হতে চলেছে এবং তা অনির্দিষ্ট কালের জন্যই (এখনও যাঁরা
আশা করছেন যে ৩রা মে লকডাউন উঠে যাচ্ছে, তাঁদের উদ্দেশ্য জানাই এই লকডাউন সম্ভবত
জুন মাস পর্যন্ত চলবে; সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চললেও অবাক হব না)। এটা হয়তো ডাক্তার
বলেই বোঝা সম্ভব হয়েছে। জনতা কার্ফিউর দিন পিজি হাসপাতালে ছিলাম। আবাসনে ফিরেই ঝটপট
কর্মীদের নিয়ে একটা মিটিং সেরে ফেললাম। উদ্দেশ্য একটাই আবাসন সিল করে ফেলা। লকডাউন
নয় একেবারে সিল। একটু ভুল হলে এক লহমায় সব শেষ – সবাই বৃদ্ধ। দেখেছেন তো করোনায়
বৃদ্ধরাই মারা যাছেন। আমাদের কর্মী
মেয়েদের প্রস্তাব দিলাম ফ্যামিলি নিয়ে চলে আসতে। কেউ আসল, অনেকেই পারল না। শেষে
হিসাব করে দেখলাম মাত্র চারজন মেয়ে আয়া হিসাবে আর রান্না ঘরে কোন রাঁধুনি নেই। আর আমাদের
নিজস্ব লোকজন মিলিয়ে সর্বমোট আট জন। তাই সই। আমাদের দুটি আবাসনের ছোটটি থেকে
সবাইকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে চলে আসলাম তালা বন্ধ করে। এর পরে যে কাজটা করলাম
সেটা হল খাদ্য মুজুত করা। চাল-ডাল-তেল-নুন-চিনি ইত্যাদি। লক ডাউনের প্রাথমিক দিকে
সব কিছুর আকাল আর চড়া দাম। মুদি দোকানে রেশনিং চলছে পুলিসের নির্দেশে। সবাই ঘরে
খাবার মজুত করছে। তার মধ্যেই দু কুইন্টাল চাল, ৩০ লিটার ভোজ্য তেল ইত্যাদি ইত্যাদি
মজুত করে ফেললাম। এর পরের পর্ব পুরো বাড়ি শোধন। ডিসিনফ্যাকট্যান্ট দিয়ে পুরো বাড়ি
পরিস্কার করলাম। অবশ্য এটা আবার করব। একদম সদর গেটে তালা। শুধুমাত্র চিকিৎসা
কর্মীরা রক্ত নিতে, অক্সিজেন সাপ্লাই করতে ইত্যাদি কাজে প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। তাও
সারা শরীর একেবারে শোধন করে ঢোকানো হচ্ছে।
এই মুহূর্তে আমাদের সবাইকেই সব কাজই করতে হচ্ছে।
আমাকেও তাই। স্যালাইন-অক্সিজেন ব্যবস্থা করা, রান্না করা, বাসন মাজা, রোগীদের স্নান
করানো আর শেষ ভয়ঙ্কর কাজ যেটা হল বাজার করার জন্য বাইরে বেরোন। আমার সহযোগী
স্বপনদা। স্বপন মন্ডল। বাইরে বেরোচ্ছি সপ্তাহে তিনবার। স্বপনদাকে নিয়ে গাড়ির কাচ
বন্ধ করে। বাজারে ঢুকতেই হচ্ছে। ভয় নিজেকে নিয়েই। যদিও অশোকনগরে একটাও কেস নেই।
তবে ডাক্তার হিসাবে জানি এই অসুখ ভারতে এয়ারবোর্ন হতে আর দেরী নেই। তখন মাস্ক-এক
মিটার দূরত্ব-সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এসব আর কিছুই কাজে আসবে না। তখন আর লক ডাউন নয়,
সিল করাই একমাত্র অস্ত্র।
শ্রী প্রদীপ
বিশ্বাস ভালো আছেন। বাইপাস অপারেশন সফল। লকডাউনের মধ্যেই পিজি হাসপাতাল থেকে ফেরত
এনেছি। আর এক সদস্যাও হাসপাতালে ভর্তি
ছিলেন। তাঁকেও ফেরত নিয়ে আসা হল। এখন ঘরেই চলছে অক্সিজেন, স্যলাইন, ইনজেক্সন
ইত্যাদি। পরমায়ু আর নেই। বছর পাঁচেক ধরে আমাদের এখানে ছিলেন। ডিমেন্সিয়ার রোগী। হেড
মিস্ট্রেস ছিলেন। আবার এঁর মেয়ে-জামাই কল্যাণী সিনিয়ার সিটিজেন হাউসিং-এর সদস্যও
বটে। এর মধ্যে আরেক ঘটনা। শিলিগুড়ি থেকে আমাদের এক সদস্যাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে
নিয়ে আসতে হল এই সংকটের মধ্যে। ইনিও ডিমেন্সিয়ার রোগী। ওঁর স্বামী হাসপাতালে
আইসিইউ-তে ভর্তি অ্যাজমা থেকে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে। তিনি মারাও গেলেন।
কল্যাণী সিনিয়ার
সিটিজেন হাউসিং-এর কাজ থেমে নয়, থমকে গেল। গোটা পাঁচেক জমি রেজিস্ট্রেশন (সর্বমোট
পাঁচ বিঘা জমির উপর), গোটা তিনেক মিউটেশন, একটা কনভারসান আটকে রইল। তবে এর মধ্যেই
ফোনে ফোনে আরো একটা ১৭ ডেসিমেল জমির ডিল সেরে ফেলেছি। কল্যাণী থানা থেকে পারমিশন
বের করে লোক দিয়ে বর্ধমানের গুসকরায় জমির মালিকের হাতে টাকা পাঠানোও হয়ে গেছে।
জমিটা কিছুতেই হচ্ছিল না। হয়ে গেল। এটা বোধ হয় লকডাউনের পজিটিভ ফল। কলকাতায় আমাদের
একটি মিটিং হওয়ার কথাও ছিল। তাই আর্কিটেক্ট শ্রী পল্লব পালের সাথে তাঁর বাড়িতে একটা আলোচনাও সেরে নিলাম। তিনি নির্দেশ দিলেন যন্ত্রের সাহায্যে জমি আবার
মাপতে যাতে প্রথম বাড়ি করার সঠিক জায়গাটা নির্বাচন করা যায়। তারপর সয়েল টেস্টিং।
জমি মাপার পর তিনি জমিতে আসবেন বলে জানালেনও। এগুলো মিটিং-এর আগেই সারতে
চেয়েছিলাম, যাতে সবাইকে জমির বর্তমান মানচিত্র ও প্রথম বিল্ডিং-এর সঠিক অবস্থানটা
মিটিং-এ জানাতে পারি।
যাঁরা হাউসিং-এর
সদস্য, তাঁরা জানেন যে ফার্মিং, ডেয়ারী এবং পোল্ট্রি আমাদের প্রজেক্টেরই মধ্যে
অন্তর্গত। আমরা চাই আমাদের প্রয়োজনীয় সব্জী, দুধ এবং মুরগীর মাংস নিজেরাই বানিয়ে
নেব। এর জন্য গত দু মাস ধরে আবাসনের ভিতরেই প্রায় এক বিঘা মত জমিতে অর্গানিক
ফার্মিং করছিলাম। বিভিন্ন ফসল – কলমী শাক, বরবটি থেকে অফ সিজিনের বাঁধাকপি
পর্যন্ত। সহযোগী হিসাবে একজনকে দৈনিক
মজুরীর ভিত্তিতে রাখা হয়েছিল। সিল করে দেওয়ার ফলে সে বেচারার আসা বন্ধ হয়। কিন্তু
যে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে, তাকে তো আর বন্ধ রাখা যায় না। গাছ যেমন বেড়ে চলেছে, তেমন
আগাছাও। তাই দৈনিক দেখভাল, যেমন আগাছা নিড়ানো, জল-সার-ওষুধ দেওয়া চলেছেই। আর সেটা
আমাকেই এখন করতে হচ্ছে। দিনের সিংহ ভাগ সময় এতেই যাচ্ছে। ভালো লাগছে অবশ্য। কত কিছু
শিখছি, বিশেষত গাছের রোগ ও তার চিকিৎসা। ডাক্তার বলে একটা সুবিধা তো পাচ্ছিই। যখন
রোগটা সেরে যাচ্ছে, তখন মানুষের রোগ সারালে যেমন আনন্দ হয় তেমনই হচ্ছে। এর সাথে চাষ বাস সম্পর্কিত পড়াশোনা, ফার্মিং
ইন্সট্রুমেন্ট, সোলার পাওয়ার, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, ডেয়ারী এবং পোল্ট্রি
সম্পর্কিত পড়াশোনা চলছেই। লকডাউনের সময়টা বেশ কাজে লাগছে। বর্তমান সময়ে সোলার
পাওয়ার একটি প্রয়োজনীয় এবং অর্থ সাশ্রয়কারী একটি পদক্ষেপ। সোলার পাওয়ারের
যন্ত্রপাতির দাম অনেক কমেছে, আধুনিক হয়েছে, সাবসিডিও পাওয়া যায়। তার উপর অন গ্রিড সিস্টেম হওয়াতে বিদ্যুত খরচের
সাশ্রয় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত করা যায়।
আর একটি কথা
হাউসিং-এর সদস্যদের জানিয়ে রাখি যে ডেয়ারী এবং পোল্ট্রির জমি ইতিমধ্যেই হস্তগত
হয়েছে। বিঘা খানেক। জমিটা অবশ্য অবশ্যই
আপনাদের কম্পাউন্ডের মধ্যে নয়। রাস্তার এপার ওপার। সুতরাং নাকে গন্ধ লাগবে
না। চাষের জন্য বিঘা চারেক জমি দেখেও রাখলাম – কথাবার্তাও এগোচ্ছিল। এখন তো সবই
গোল হয়ে গেল।
আবার অশোকনগরের আবাসনের
কথায় আসি। বর্তমানে আমি রান্নাঘরের দখল নিয়েছি। কমার্শিয়াল কিচেন আমার অনেকগুলো
প্যাশনের মধ্যে একটি। একে জিনিসপত্রের
আকাল, অনেক বুঝেশুনে বেরোতে হচ্ছে। তাই রান্নাঘরে জিনিস অপ্রতুল। নিউট্রিশন সবার
ঠিক রাখতে হবে। দেখতে হবে কেউ যেন অসুস্থ হয়ে না পড়েন। চাষবাস, রান্নাবান্না
ইত্যাদি মিলিয়ে বেশ কায়িক পরিশ্রম হচ্ছে। মোটামুটি সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা
পর্যন্ত। এটাকেও পজিটিভ ভাবেই নিয়েছি। সত্যি কথা বলতে কি কায়িক পরিশ্রম বেশ কমেই
গিয়েছিল। চার চাকার ঘোড়ায় চেপে সারাদিন হটর হটর। কখনও নিজে চালাচ্ছিলাম, কখনও
ড্রাইভার। বেড়ে চলা শরীরের ওজনের লাগাম ধরতে পেরেছি। আবাসনে এখন প্রত্যেকেই ২৪ ঘন্টা ডিউটি দিচ্ছে।
এটা কতদিন সম্ভব? কর্মীরাও মানুষ। তাঁদের শরীরের দিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হয়েছে।
খিটিমিটি লেগে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সামলাতে হচ্ছে।
বরফের মতো মাথা ঠান্ডা রাখতে হচ্ছে। রেগে গিয়ে কেউ ‘রইল ঝোলা চলল ভোলা’
বললেই হয়ে গেল। আমরা কেউই জানি না কতদিন এই অবস্থা চলবে। শুধু এটুকু বুঝতে পারছি
যে সামনের দিনগুলো আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হতে চলেছে। হেরে গেলে চলবে না। হেরে যেতে
আসি নি।
প্রত্যেকদিন
অন্ততঃ পাঁচটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসছে তাঁদের অসুস্থ প্রবীণ পরিজনকে সাময়িক
ভাবে বা বরাবরের জন্য রাখার অনুরোধ জানিয়ে। বুঝতে পারছি তাঁরা আতান্তরে পড়ে
গিয়েছেন। সম্ভবতঃ আয়া আসছে না। কিন্তু নান্য পন্থা। আবাসন সিল করে ফেলেছি যে। এছাড়া
আমাদের আবাসনে থাকতে গেলে আগে বাড়ির লোককে ভিজিট করতে হয়। তারপরে আমরা তাঁদেরই
খরচে তাঁদের বাড়ি ভিজিট করি। তারপর নেওয়া। এই অবস্থায় এগুলো করা সম্ভব নয়। যেসব নন রেসিডেন্সিয়াল মেম্বার ( হাউসিং সমেত)
অসুস্থতা জনিত কোন সমস্যায় পড়লে জানাতে পারেন। আমরা তাঁদেরকে আবাসনে নিয়ে চলে আসব।
তবে এই সুবিধাটি শুধুমাত্র কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার
মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
সংস্থার জন্য
যেভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি এবং যে কাজগুলো এই ফাঁকে করব বলে ঠিক করেছিঃ
হাউসিং-এর ওয়েবসাইটের
কন্টেন্ট লিখে ফেলা, ওয়েবসাইটে সদস্যদের আপডেট করা, যাঁরা যাঁরা মানি রিসিট পান নি
তাঁদের মানি রিসিট বানিয়ে ফেলা, অক্টোবর (আমি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লক ডাউন চলবে ধরে
নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেছি) থেকে কি কি প্রোগ্রাম করা যেতে পারে তার একটা লিস্ট
করে ফেলা এবং সেই সব ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করা বা যোগাযোগ বজায় রাখা। আর সব
শেষে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে ভালভাবে পড়াশোনা করা। আর একটি কাজও করব। সেটা হল
আমাদের হাউসিং-এর সদস্য প্রফেসর অনুতোষ ভক্তের হোটেল ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্টের
বইটা পড়ে ফেলা। বইটা আমাজন থেকে আগেই কেনা আছে।
এই লেখাটি হাউসিং
হোয়াটস্যাপ গ্রুপ, ট্যুর গ্রুপ, আবাসিকদের পরিবার পরিজনদেরকে, শুভানুধ্যায়ীদেরকে
এবং ঠিকানা শিমলা সম্পর্কিত ব্যক্তিদেরকে একযোগে পাঠানো হল ও ব্লগে (www.thikanashimla.blogspot.in) পোস্ট করা হল।
এই লেখাটি যাঁরা
পড়ছেন তাঁদের মধ্যে কেউ যদি সোলার পাওয়ার, ডিজিটাল এগ্রিকালচার, অর্গানিক ফার্মিং,
ডেয়ারি, পোল্ট্রি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ থাকেন
দয়া করে হোয়াটস্যাপে (9330843394)
জানাবেন। যোগাযোগ করতে
চাই কিছু শেখার জন্য। আপাততঃ এখন ফোনে, লকডাউন উঠে গেলে সাক্ষাতে। চিরকাল
শিক্ষানবিশ থাকতে চাই।
লকডাউনে সব কিছুর
কাটছাঁট চলছে। লেখাটি যদি বড় মনে হয় তাহলে দয়া করে নিজের মতো করে কেটে ছেঁটে
নেবেন।
ধুঃ শালা।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতেই ভুলে গেছি। নববর্ষের শুভেচ্ছা নেবেন সব্বাই।
Dr.
Amitava De Sarkar
Secretary
*THIKANA
SHIMLA*
15.4.2020
No comments:
Post a Comment